4 days ago
#33764 Quote
বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো শুনলেই মানুষের মনে একধরনের অনুভূতি জেগে ওঠে। তেমনি একটি শব্দ হলো রাজাকার শব্দের অর্থ কি। এই শব্দটি শুধু একটি রাজনৈতিক বা সামরিক পরিভাষা নয়, বরং এটি একটি জাতির গর্ব, সংগ্রাম এবং বিশ্বাসঘাতকতার স্মৃতির প্রতিচ্ছবি বহন করে।

রাজাকার শব্দটি এসেছে উর্দু ভাষা থেকে। উর্দুতে “রাজাকার” শব্দের অর্থ স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু বাংলাদেশে এই শব্দটি একটি ভিন্ন এবং গভীর অর্থ বহন করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই শব্দটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবেশ করে এবং তখন থেকেই এটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করার জন্য কিছু বাঙালিকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নেয়। এই দলটির নাম দেওয়া হয় রাজাকার বাহিনী। তারা মূলত পাকিস্তানি বাহিনীর হয়ে কাজ করতো, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাতো, মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানিয়ে দিতো, এবং বিভিন্ন সময় গ্রামে-গঞ্জে গণহত্যায় অংশ নিতো। এই বাহিনীর সদস্যরা তখন দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যার ফলে ‘রাজাকার’ শব্দটি বিশ্বাসঘাতক, দেশদ্রোহী বা দেশবিরোধী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

আজকের প্রজন্মের অনেকেই শুধুমাত্র শব্দটি শুনে এর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বোঝেন, কিন্তু এর পেছনের ইতিহাস অনেক বেশি বেদনাদায়ক। রাজাকারদের কারণে লাখো মানুষ জীবন হারিয়েছে, অনেক মা-বোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এবং একটি জাতিকে তাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে আরও কঠিন করে তুলতে হয়েছিল।

স্বাধীনতার পর, রাজাকার শব্দটি বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাষায় এমনভাবে গেঁথে গেছে যে, এখনো কাউকে যদি “রাজাকার” বলা হয়, সেটি বড় ধরনের অপমান হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি শুধু ঐতিহাসিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও একটি ভারী শব্দ হয়ে উঠেছে।

অনেক সময় দেখা যায়, রাজনৈতিক বক্তৃতা বা বিতর্কে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই শব্দ ব্যবহারে সংবেদনশীলতা থাকা জরুরি, কারণ এটি কেবল একটি রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শ নয়, বরং এটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কষ্ট, রক্ত, ত্যাগ এবং বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক।
0